কোথাও ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে দেখা যায় প্রথমে অবশ্যই কক্সবাজারের নাম এসে যায়। কেবল মাত্র দেশীয় পর্যটকই নয় বরং বিদেশ থেকেও প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এই সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসে। কক্সেসবাজার হচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত যা ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শাণিত রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। ১২০ কিলোমিটারের সমুদ্র সৈকত ঘিরে প্রচীন ঐতিহ্য এবং দর্শনীয় স্থানের কারণে প্রতি বছর কক্সবাজারে ছুটে আসে ভ্রমণ পিপাসু মানুষেরা যা তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত। কক্সবাজার চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৫২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য বন্দর এবং সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন। কক্সবাজারের সামুদ্রিক মাছ এবং মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আপনার মনকে প্রফুল্ল করে তুলবে।
নবম শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে ১৬১৬ সালে মুঘল অধিগ্রহণের আগে পর্যন্ত, কক্সবাজার সহ চট্টগ্রামের একটি বড় অংশ আরাকান রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। মুঘল সম্রাট শাহ সুজা পাহাড়ী রাস্তা অনুসরণ করে আরাকানের দিকে যাওয়ার সময়ে, তিনি কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা হৃদয়ে মুগ্ধ হন এবং এখানেই ক্যাম্প স্থাপনের আদেশ দেন। তার যাত্রাবহরের সাথে সাথে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা নামক এক অদ্ভুত স্থানে এসে অবস্থান নেয়, যেখানে প্রায় এক হাজার পালঙ্কী থাকতেন। “ডুলহাজারা” শব্দটি অর্থ হাজার পালঙ্কী। এরপরে, মুঘলদের পশ্চাতে, ত্রিপুরা এবং আরকান পরে, পর্তুগিজ এবং ব্রিটিশ শাসনে এই এলাকার নিয়ন্ত্রণের সময়ে এই ভূখণ্ডের ইতিহাস এসেছে। কক্সবাজার নামটি এসেছে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নামে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক অফিসারের নাম থেকে। কক্সবাজারের আগের নাম ছিল পালংকি। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অধ্যাদেশ, ১৭৭৩ জারি হওয়ার পর ওয়ারেন্ট হোস্টিং বাংলার গভর্নর হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। তখন হিরাম কক্স পালংকির মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। ক্যাপ্টেন কক্স আরাকান শরণার্থী এবং স্থানীয় রাখাইনদের মধ্যে বিদ্যমান হাজার বছরের পুরোনো সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করেন এবং শরণার্থীদের পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেন কিন্তু কাজ পুরোপুরি শেষ করার আগেই মারা (১৭৯৯) যান। তার পুনর্বাসন অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এর নাম দেয়া হয় কক্স সাহেবের বাজার। কক্সবাজার থানা প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৪ সালে এবং পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে।
বর্তমানে কক্সবাজারে থাকার জন্য ফাইভস্টার ক্যাটাগরির অনেক হোটেল হয়েছে। ফোরস্টার ও থ্রিস্টার বা সমমানের হোটেল ও রিসোর্টের সংখ্যাও কম নয়। সৈকতের কাছে বেশিরভাগ হোটেলই ভাল মানের। হোটেল ও রিসোর্ট কলাতলী ও লাবনী পয়েন্টে অবস্থিত। ইনানির নিকটবর্তী এলাকাতেও থাকার জন্য বেশকিছু হোটেল আছে। তাছাড়া চাইলে ফ্ল্যাট বাসা ভাড়াও পাওয়া যায়।এছাড়া এর বাইরে আছে ইকো রিসোর্ট। মৌসুম ভেদে অর্থাৎ পিক ও অফ-পিক অনুযায়ি ভাড়ার মধ্যে তারতম্য হয়। বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পিক এবং মে থেকে আগস্ট অফ-পিক টাইম হিসাবে গণ্য হয়ে থাকে। তবে এখন সব সময়ই লোকে লোকারণ্য থাকে।
প্রতিটি হোটেলেই নিজস্ব রেস্টুরেন্ট থাকে, যেখানে বরাবরই খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি। অধিকাংশ হোটেলে সকালের নাস্তা রুমের ভাড়ার সাথে যুক্ত অর্থাৎ কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে থাকে। সেক্ষেত্রে লাঞ্চ ও ডিনার বাইরে কোথাও করতে চাইলে কোনো চিন্তা নেই কারণ এখানে রয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক রেস্টুরেন্টে। কলাতলী রোডে অবস্থিত রেস্টরেন্টের সংখ্যা বেশি।
বর্তমানে কক্সবাজার হল পরিবারসহ কোন ধরনের ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ এবং বিভিন্ন ধরনের প্রকৃতির আবহাওয়া এখানে আপনার মনকে প্রফুল্ল করে তুলবে এবং বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছের স্বাদ আপনার জীবনকে স্বাদময় করে দিবে। কোন একটি উক্তিতে আছেন সমুদ্রের বিশালতা দেখলে নিজেরও মন বিশাল হয়ে ওঠে। তাই আর দেরি কেন চলে আসুন কক্সবাজারণে।